Man cannot stand alone | মানুষ একা দাঁড়াতে পারে না


মানুষ একা দাঁড়াতে পারে না
[Man cannot stand alone]

প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জুলিয়ান হাক্সলি (১৮৮৭-১৯৭৫) ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের ঈশ্বরের প্রয়ােজন নেই, এই ধারণাটিকে তিনি তার ‘ম্যান স্ট্যান্ডস্ এ্যালােনে’ গ্রন্থে ব্যাক্ষা করেছেন। 
এটা উল্লেখ্য যে, বিখ্যাত আমেরিকান বিজ্ঞানী ক্রেসি মরিসন তার ‘ম্যান ডাজনট স্ট্যান্ড অ্যালােন’ গ্রন্থে এই তত্ত্বের বিরােধিতা করেছেন। 
এমনকি আজকের দিনেও অনেকই এই মত ব্যাক্ত করেন যে, তাদের ঈশ্বরের প্রয়ােজন নেই, ঈশ্বরে বিশ্বাস ছাড়াই তারা তাদের সাফল্য পেতে পারে। কিন্তু, একটু পর্যবেক্ষন করলে আপনি দেখবেন যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিপক্ক ধারণার  প্রতিফলন নয়। আসলে এই ধারণা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চল্লিশ বছরের কম বয়সীদের অপরিণত মস্তিষ্কপ্রসূত। মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক পাঠ অনুযায়ী মানুষ মাঝ বয়সে উপনীত হওয়ার পর পরিপক্কতা লাভ করে। উপরন্তু জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে কোন জোরালাে মত প্রকাশের অবস্থায় তারা থাকে না। পর্যবেক্ষনে দেখা যায় যে অপরিণতরাই ঈশ্বর সন্মন্ধে এমন বাহ্যিক মন্তব্য করেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানঅর্জনের মাধ্যমে অপরিণত অবস্থা থেকে পরিণত হওয়ার ক্ষনে আস্তিক ও নাস্তিক সহ সবমানুষ ঈশ্বর প্রশ্নে গম্ভীর হয়ে ওঠে। একজন দার্শনিক যথার্থই বলেছেন, "ভাসা ভাসা জ্ঞান মানুষকে ঈশ্বরের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রগাঢ় জ্ঞান তাদেরকে তার কাছে ফিরিয়ে আনে।"

এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেওয়া হল।

ব্যবসা শুরু করতে চলা একজন উচ্চাকাঙ্খী ব্যবসায়ীর কথা আমরা ধরি। তার ব্যবসা বাড়তে থাকে যথাক্ষন পর্যন্ত না সেটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। তখন সে বুঝতে পারে যে, তার নির্দিষ্ট্য ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা তার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা পূরণে বাধা দিচ্ছে। সে বুঝতে পারে যে তার স্বপ্ন স্বার্থক করতে আরও বিশাল পৃথিবী প্রয়ােজন। সে অনুভব করে যে তার চেয়েও শক্তিশালী শক্তির অস্তিত্ব আছে যে শক্তির সহযােগীতা ছাড়া সে তার পরিকল্পনা স্বার্থক হতে পারে না।

কারও জীবনের লক্ষ্য:-

অধিকাংশ যুব শক্তি ব্যপক উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে জীবনে প্রবেশ করে। কিন্তু বারবার সে এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করে যা তার অসহায়তা প্রকাশ করে। রােগ, দূর্ঘটনা, ক্ষতি, অসুবিধা— এই সবগুলিই তাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাদের জীবন হল অপূর্ণ আকাঙ্খর স্তুপ মাত্র। তখন সে দেখে যে, মহান একজনের পার্থিব সাফল্য যিনি তার সকল সম্পদ ফেলে অবশ্যম্ভাবী ভাবে একশ বছরের ব্যপ্তির মধ্যেই মারা যান। এমন তিক্ত প্রতিফলন প্রমাণ করে যে, শৈশব ও যৌবনের যাবতীয় মধুর স্বপ্ন গুলাে অজ্ঞতা থেকেই উদ্ভূত। কারণ অসম্পূর্ণ পৃথিবীর মধ্যে সার্বিক পূর্ণতাপ্রাপ্তি অসম্ভব। 

একজনের জীবনের লক্ষ্য অর্থ উপার্জন হােক বা খ্যাতি বা ক্ষমতা অর্জন হােক বা এ জাতীয় অন্যকিছু—তা আদর্শের চেয়ে হীনকায় প্রমাণিত হয়। যে ব্যক্তি এই জিনিসগুলি অর্জন করেছে তা তার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। সে সর্বদা অসন্তুষ্ট থাকে। অর্জিত সাফল্য অধরা সাফল্যের মধ্যেই অর্থহীন হয়ে ওঠে।

এই ভাবে প্রাত্যহিক জীবনে মানুষের উপর অসহায়তা বােধ নেমে আসে। এই অসহায়তাকে তুলনা করা যায় যেই অসহায়তার সঙ্গে যেটা সে দূরবীনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষনের পর উপলব্ধী করে।

ঈশ্বর স্থির বিশ্বাশের উৎস সমগ্র মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষন করার মতাে কোন অতিশক্তিশালী দূরবীন যদি আপনার থাকে, তবে আপনি সর্বপ্রথমে পৃথিবী নামক বিরল গ্রহটিকেই দেখবেন। আপনি লক্ষ্য করবেন যে, সম্পূর্ণ প্রাণহীন মহাবিশ্বের মাঝে এই ছােট গ্রহটিতে প্রাণের প্রাচুর্য ও সর্বপ্রকার জীবন রক্ষাকারী উপদান বিদ্যমান। এই বিরল ব্যতিক্রমী দৃশ্য এতটাই বিহুলতাময় যে আপনি বিস্ময়ে আবির্ভূত হয়ে পড়বেন।

আপনি আরও দেখবেন যে পৃথিবী তার চাদ ও অন্যান্য গ্রহদের সঙ্গে অব্রিাম গতিশীল যেমন— এই তার অক্ষ ও কক্ষের উপর সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। তারপর, সমগ্র সৌর জগত নক্ষত্রপুঞ্জের আধিকপ্রসস্থ বৃত্তের মধ্যে ঘূর্ণায়মান এবং এই নক্ষত্রপুঞ্জ অন্য কোন নক্ষত্রপূজের আরও অধিক প্রসস্থ বৃত্তে ঘূর্ণায়মান। 

বিস্তৃত, অসীম মহাকাশে নক্ষত্র ও গ্রহদের এই সঞ্চারণ অপনার চোখে আশ্বর্যজনক ভাবে অদ্ভুত হিসাবে আবির্ভূত হবে। তখন আপনি দেখবেন নক্ষত্র নামক বৃহদাকার আগুনের গােলা যে গুলি প্রচন্ডগতিতে ঘুরছে। এই নক্ষত্ররাজির মধ্যে আমাদের পৃথিবীকে বালির আকারের মনে হয়। এই দৃশ্য আপনার এতই অদ্ভুত লাগবে যে আপনার অস্তিত্বই নগন্যও মূলহীন বলে মনে হবে। এই অভিজ্ঞতা আপনার দুটি বিষয়কে অবিষ্কার করতে সাহায্য করবে। প্রথমত মহাবিশ্বে ক্ষমতাবান ঈশ্বর আছেন যিনি এর ধারক এবং সৃষ্টিকর্তা। আপনি যদি মহাবিশ্বের এই বিরল দৃশ্য অবলােকন করেন আপনার মন স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বলে উঠবে যে মহাবিশ্বই সৃষ্টিকর্তার স্পষ্টপ্রমাণ। দ্বিতীয়ত, আপনি, এই বিশ্বে নিজেকে অসহায় এবং তাৎপর্যহীন জীব হিসাবে অনুভব করবেন এবং ঐ ঈশ্বর ব্যতিত আপনার অস্তিত্ব অসম্ভব বলে মনে হবে।এটাই জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। এই সত্য উপলব্ধী করলেই একজন স্বেচ্ছায় ঈশ্বর অভিমুখে ধাবিত হবে। তার সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে সে চিৎকার করে বলবে, “হে ঈশ্বর, আমাকে সাহায্য করুন। আপনার সাহায্য ছাড়া সবকিছু নিরর্থক হয়ে যাবে।”

ঈশ্বর জীবনের অধিনায়ক :-

এই বিস্তৃত মহাজগতে ঈশ্বরই একমাত্র মানুষের সাহায্যের উৎস। ঈশ্বরের তত্ত্বাবধানেই মানব তরী নিরাপদে তীরে উপনীত হয়। ঈশ্বরে বিশ্বাসই মানুষের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিশ্বাস ব্যতীত মানুষ অস্তিত্বহীন। প্রতিটি মানুষের প্রকৃতি তাকে ঈশ্বরকে চেনার তাগিদ অনুভব করায়। ঈশ্বর ব্যাতীত আমাদের জীবন সম্পূর্ণ হতে পারে না। ঈশ্বরের সাহায্য ব্যতীত আমরা জীবনে সফল হতে পারিনা।

মানুষের অবস্থান সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা যায়—
কয়েক বছর আগে একটি জাহাজ আমেরিকা উপকূল থেকে আফ্রিকা অভিমুখে পাড়ি দেয়। গভীর সমুদ্রে জাহাজটি প্রচন্ড ঝড়ের সম্মুখীন হয়ে দুলতে
থাকে।সকল যাত্রীভীত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এই সঙ্কটের সময়ে। যাত্রীরা একটা ছােট্ট মেয়েকে ডেকের কোনে বসে থাকতে দেখল। ঝড়ে বিচলিত না হয়ে সে তার পুতুল নিয়ে খেলছিল। এই দৃশ্য দেখে একজন উৎসুক হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাে, “তুমি জানাে আমাদের জাহাজের কি হয়েছে?” মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলাে, “ব্যাপারটা কি?” যাত্রীটি তাকে বলল যে জাহাজটি প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়েছে। মেয়েটি শান্তভাবে উত্তরদিল,
"তুমি জানো আমার বাবা এই জাহাজের নাবিক। তিনি এটিকে ডুবতে দেবেন না।"
    বাবার প্রতি মেয়ের এই বিশ্বাসই এই সংকট মুহূর্তে তাকে ভয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল। একজন ধার্মিকের কাছে ব্যাপারটি একই রকম তারও তার সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি একই রকম শিশু সুলভ বিশ্বাস থাকে। তার বিশ্বাস টা আরও তীব্রতর। যখন বিপর্যয় হানা দেয়, সে দৃঢ় ও স্থির বিশ্বাসে বলতে পারে যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই তার জীবন তরীর মালিক। তিনি কোনো সময় বা কোনো অবস্থাতেই এটাকে ডুবতে দেবেন না।
    এটাই স্থির বিশ্বাসের ধরন, যেটা মানুষের জিবনে প্রয়োজন এবং ঈশ্বরই এমন স্থির বিশ্বাসের একমাত্র উৎস।

Source:
Maulana Wahiduddin Khan (Bengali Translation)
Booklet published by GoodWord Books.
Centre for Peace and Spirituality Forum.
Delhi, India.

My Reflections:
Every design has a designer. Your shirt is a design, so it has a designer. A peacock's feather is a design and it is thousand times better than your Shirt, so, when your shirt cannot create itself then what about the peacock's feather? Surely, there is a creator behind this.
 
We believe it or not but there will be no atheists on a sinking ship. Because when man sees death he immediately calls to God.

Man cannot stand alone on Earth. He, every moment, depends on God for anything.
                                                                    -Aquib Afsar


প্রত্যেক নকশার এক নকশাকার আছে। তোমার জামা একটা নকশা,তাই এর একজন নকশাকার আছে। এটা কখনোই নিজে থেকে তৈরি হতে পারে না। ময়ূরের পালক একটা নকশা এবং এটা তোমার জামার চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুন্দর, তো যখন তোমার জামা নিজে থেকে তৈরি হতে পারে না তালে ময়ূরের পালক কি করে সৃষ্টি হবে? নিশ্চিত ঈশ্বরই এর সৃষ্টিকর্তা।

আমরা বিশ্বাস করি আর না করি কিন্তু এটা একটা সত্য যে, ডুবন্ত জাহাজে কেউ নাস্তিক থাকে না। যখন মানুষ তার মৃত্যুর মুখে আসে তখন সে ঈশ্বর কেই ডাকে। 

মানুষ এই পৃথবীতে একা দাঁড়াতে পারে না, সে জীবনের প্রতি মুহূর্তে ঈশ্বরের উপরই নির্ভর থাকে। 

                                                                - আকিব আফসার

Comments

Popular posts from this blog

He Died ; Soon will I also | The Incident

Sharing Islam with PK

Fear of Change | Aquib Afsar